সম্প্রতি শেষ হয়েছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। এখনও বাঙ্গালী মননে রেশ কাটেনি দুর্গাপুজোর। (Film review)
সেই রেশটাই যেন আরও কিছুটা জিইয়ে রাখলেন মৈনাক ভৌমিক।

বাড়ির দুর্গাপুজোর এসেন্সটা তিনি রেখেছেন অপরাজিতা আঢ্য, কৌশিক সেন, সৌরসেনী মৈত্র অভিনীত ‘একান্নবর্তী’ ছবিতে।
ছবির প্লট তৈরি হয়েছে দুর্গাপুজো কে ঘিরে। আধুনিক সমাজের একটি নিউক্লিয়ার পরিবার।
কিন্তু, সেই পরিবারের মানুষগুলির মধ্যে সম্পর্কের সুতোগুলো একসময় আলগা হতে শুরু করে দেয়।
বাবা-মা আর দুই মেয়ের মধ্যে সম্পর্কের সমীকরণ থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত জীবনের ক্রাইসিস।
সবটাই রুপোলি পর্দায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন পরিচালক মৈনাক।
ছবিতে দুই বোনের ভূমিকায় অভিনয় করছেন সৌরসেনী মৈত্র ও অনন্যা সেন।
মায়ের ভূমিকায় অপরাজিতা আঢ্য। ওয়েব সিরিজের পরিচালকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কৌশিক সেন। একসূত্রে খুব সুন্দর করে বাঁধা এই চরিত্রগুলি।
তবে তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যাগুলির সঙ্গে খুব সহজেই দর্শকরা মিলিয়ে নিতে পারবেন নিজেদের জীবনকে।
সম্পর্কের তিক্ততা, ভুল বোঝাবুঝি এবং অবশেষে সমাপ্তি।
ফের শূন্যস্থান খালি রেখেই সমান্তরাল লাইনে আবার হেঁটে চলা অন্তহীন পথে।
ছবিটির প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে দিয়েই পরিচালক ফুটিয়ে তুলেছেন এই প্রতিটি বিষয়কে।
আর রয়েছে একটি গান। প্রসেনের সুরে লগ্নজিতা চক্রবর্তীর গলায় ‘বেহায়া’ গানটি নিঃসন্দেহে ছবির অন্যতম আকর্ষণ।
তবে এত কিছুর মধ্যেও কোথাও গিয়ে যেন মিসিং লিঙ্ক রয়ে গেছে ছবিটিতে।
ছবির নাম ‘একান্নবর্তী’ হলেও বলা বাহুল্য এর সঙ্গে কোনও যথার্থতা নেই ছবিটির।
একান্নবর্তী পরিবারের তেমন কোনও চিহ্ন মেলেনি পুরো ছবিতে। (Film review)
দুর্গাপুজোর বাড়িতে কাকা-জেঠা, মামা-মাসিদের দেখা নেই।
অন্যদিকে, বাড়ির দুর্গাপুজোকে ঘিরে যে পরিমাণ ব্যস্ততা দেখা যায়, সেটি ধরা পড়েনি মৈনাকের ছবিতে।
কোথাও গিয়ে যেন বাড়ির দুর্গাপুজোর আবহটাই অধরা রয়ে গিয়েছে।
অপরাজিতা আঢ্য তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে যথাযথ। তার অভিনয়ও এক্কেবারে সাবলীল।
সৌরসেনীও তাঁর চরিত্রে মানানসই। নজর কেড়েছেন অনন্যা সেন।
তবে কৌশিক সেনের মতো তুখোড় অভিনেতাকে দিয়ে আরও কিছু করানো যেত। (Film review)
অলকানন্দা রায়ের চরিত্রটি অ্যালজাইমার্স রোগে আক্রান্ত হলেও, সেটির যথাযথ ব্যবহার ছবির মধ্য হয়নি।
গল্পের সাব প্লটগুলি সঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হলেও সামগ্রিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে কোথাও গিয়ে সেগুলি বড্ড বেমানান লেগেছে।
অন্যদিকে, বারাসতের মতো জমজমাট শহরতলিকে ‘গ্রাম’ বলাটা একটু বাড়াবাড়িই লেগেছে সবশেষে।
বাংলা ছবিতে বারবার ইংরাজি ডায়লগের ব্যবহারও কানে লেগেছে খুব বেশি করে।
ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘দোসর’ ও ‘উৎসব’ ছবি দু’টি থেকে মৈনাক যে বেশ কিছুটা অনুপ্রাণিত হয়েছেন, তা ছবিটির বেশ কিছু দৃশ্যে থেকে পুরোপুরি পরিষ্কার।
ক্রেডিটে অবশ্য তিনি ঋতুপর্ণ ঘোষকেই উৎসর্গ করেছেন ছবিটি।