
সভ্যতার জননী পূণ্য সলিলা গঙ্গা। গঙ্গার পলিতে এ দেশের উর্বরতা, সমৃদ্ধি। গঙ্গার তীরে লালিতপালিত এ দেশের হাজারো গ্রাম-শহর। গঙ্গা আমাদের ঐতিহ্যের সাথে, আমাদের অস্তিত্বের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। সেই পবিত্র নদীকে যখন দূষণ-বিষে কলুষিত হতে দেখি তখন আমাদের কষ্ট হয় বৈকি। গঙ্গা দূষণ কেবল এক প্রাকৃতিক সম্পদের হানি মাত্র নয়। এটা আসলে আমাদের অস্তিত্বের সংকট।

দূষিত গঙ্গার জল আজ স্নানের অযোগ্য-
গঙ্গা নদীর জলকে সুপ্রাচীন কাল থেকে ভারতবাসী পবিত্র জ্ঞান করে এসেছে। আজ পর্যন্ত বহু মানুষ গঙ্গার জলে নিয়মিত স্নান করেন। তারা হয়তো জানেন না, দূষণের কবলে পড়ে গঙ্গার জল ইতিমধ্যেই হারিয়ে ফেলেছে অতীত মাহাত্ম্য। সত্যি কথা বলতে কি, গঙ্গা দূষণ আজ এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে বহু জায়গায় এ নদীর জল হয়ে পড়েছে স্নানের অযোগ্য।
সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত গঙ্গা নদীর ৫০০ কিমি গতিপথের ৮ জায়গায় অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে জলে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা নিরাপদ মাত্রার থেকে অনেক বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনকি লিটার প্রতি ১০০০০০-এরও বেশি। গঙ্গার জলে ব্যাকটেরিয়ার এমন সংখ্যাধিক্য গুরুতর জল দূষণের পরিচয় দেয়।
গঙ্গা দূষণের উৎস
গঙ্গার তীরবর্তী শহর-গ্রামের নিকাশি এবং শিল্পাঞ্চলে বর্জ্য থেকেই বেশি দূষণ ছড়ায়। গঙ্গার তীরবর্তী চাষের খেত থেকে জলে ধুয়ে আসা কীটনাশকও দূষণ বাড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গঙ্গা দূষণ হয় মূলত দু’ভাবে। একটি ক্ষেত্রে দূষণের উৎস চিহ্নিত করা যায়। অন্য ক্ষেত্রে সেটি করা যায় না। যে নালাগুলি গঙ্গায় মিশে দূষণ ছড়াচ্ছে সে ক্ষেত্রে সরকার বা প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ প্রয়োজন। পাশাপাশি গঙ্গার তীরে যত্রতত্র মলত্যাগ, নানা ধরনের বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে সরকারের দিক থেকে আরও অনেক বেশি জনসচেতনতা প্রসার প্রয়োজন।
কারণ আরও রয়েছে। গঙ্গার উপনদীগুলিতেও নিকাশি নালার বর্জ্য গিয়ে মেশে। সেই বর্জ্য সবটাই গিয়ে পড়ে গঙ্গায়। সেই দূষণ রোধের জন্য যে সংখ্যক নিকাশি বর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট তৈরির দরকার ছিল, তা করা হয়নি। পরিবেশকর্মীরা আবার দাবি করে, যে নিকাশি বর্জ্য পরিশোধন প্লান্টগুলি তৈরি হয়েছে, তাদের মধ্যে একাধিক প্লান্টই বর্তমানে কাজ করে না।
গঙ্গাকে দূষণ মুক্ত করার প্রয়াস
গঙ্গা দূষণ বন্ধ করার লক্ষ্যে ১৯৮৫/৮৬ সাল নাগাদ অনেক আশা জাগিয়ে শুরু হয়েছিলো অ্যাকশান প্ল্যানের কাজ। মূল পরিকল্পনা ছিলো গঙ্গামুখী সবকটা নালার নোংরা জল আগে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে এনে পরিশোধন করা হবে। আজ পর্যন্ত গঙ্গা অ্যাকশান প্ল্যানের অধীনে বাংলায় ৪৪টা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি হয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী সব নিকাশি নালার মুখ ঘুরিয়ে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে আনা যায় নি।‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, গঙ্গা তীরবর্তী দেশের বিভিন্ন বড় শহর থেকে দৈনিক গড়ে ৩০ কোটি লিটার বর্জ্য নদীতে এসে পড়ে। সাকুল্যে তার ১০ কোটি লিটার পরিশোধনের ব্যবস্থা রয়েছে। গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মল, কীটনাশক ও শিল্প-বর্জ্যের ছোঁয়াচ থেকে নদীকে মুক্ত করা। তা করা যায়নি।